-তুমি এটা কি ভাবে করতে পাড়লা শিহাব? (তিথি)
-আমি সব করতে পারি। (শিহাব)
-কিন্তু কেনো?
-আমার পছন্দের জিনিসের দিকে কেউ নজর দিলে কাউকে ছাড়ি না।
-তাই বলে.....
-হ্যা, যে জিনিসটা আমার না সেটা কারো হতে পারে না। আমি তো তোমাকে চেয়েছিলাম আর কিছু চাইনি। তোমার জন্যে কি বা করি নি। নিজের টিউশনির টাকা বাচিয়ে তোমাকে দিয়েছি আর সেই তুমি কি না...
-কি যা তা বলছো শিহাব?
-এখন তো যা তাই মনে হবে। নতুন কাউকে পেয়েছো তাই তো আমার সব কথা ভুল আর যাতা মনে হবে।
-ছি শিহাব,
-হা হা হা
-তুমি রিফাতকেও মেরে ফেলছো। এটা কি করে পারলা, ও না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ।
-হ্যা রিফাত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আর আমার জীবনের অমূল্যবান সম্পদের দিকে হাত দেয়ায় তাকেও দুনিয়া থেকে সড়িয়ে দিয়েছি। হা হা হা
-আর আমি কি দোষ করেছিলাম যার শাস্তি এভাবে দিলে। খুব বেশি ভালবেসেছিলাম সেই অপরাধে নাকি?
-তুমিই তো সব নষ্টের মূলে ছিলা। তোমার জন্যে আমি রিফাতকে মেরেছিলাম। ছেদে ছিলাম অনেক বন্ধুদের সংজ্ঞ। তারা বলেছিল তুমি ভাল না তাই তাদের বিভিন্ন ভাবে শাস্তি দিয়েছি। আর সেই তুমি অন্যের সাথে ফস্টি নস্টি করছো তাই তোমাকেও দুনিয়া থেকে সড়িয়ে দিয়েছি।
-হা হা হা আমি মরিনি দিব্বি বেঁচে আছি আর বেঁচে থাকব যত দিন তোমার শাস্তি হবে না।
-তুমি যিবিত থেকেও শান্তি দাও নি মরেও শান্তি দিবা না?
-হ্যা হ্যা হ্যা তোমার শান্তি নাই।
বালিশের পাশে থাকা মোবাইল টি নিয়ে তিথির দিকে ছুড়ে মারল শিহাব। আর সাথে সাথে তিথি অদৃশ্য হয়ে গেল। ফজরের আযান দেয়ার সাথে সাথেই শিহাবের ঘুম ভেজ্ঞে গেল। দরজা খোলা দেখে শিহাব ঘাবড়ে গেল। তাহলে কি তিথি বেঁচে আছে নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি তো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছি তাহলে দরজা খোলা কেনো। না এ হতে পারে না। বালিশের পাশে রাখা টিশার্ট টি পরে তাড়াতাড়ি করে চলে গেল সেই যায়গায় যেখানে রিফাত আর তিথিকে মাটি চাপা দিয়ে কবর দিয়েছিল শিহাব। গিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। তাহলে কি সব স্বপ্ন ছিল, তাহলে যে মোবাইল দিয়ে মারার পর দৌড় দিল সেটা কি ছিল? আর দরজাই বা কে খুলে দিল? এই সব চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে পৌছায় শিহাব।
-স্যার আপনি এত সকালে তাড়াহুড়া করে কি যেন বিরবির করতে করতে কই গেছিলেন (দারোয়ান)
-সেটা কি আপনাকে বলতে হবে? আপনার যা কাজ তা করুন
এক প্রকার ধমক দিয়ে বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলল শিহাব। দারোয়ান চাচা মন খারাপ করে ভাবতে লাগল। শিহাব স্যার তো আগে এমন ছিল না সব সময় সালাম দিয়ে বাবাজি বাবাজি করে কথা বলত কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে খুব বাজে ব্যবহার করতেছে কারন কী।
শিহাব রুমে গিয়ে দেখল মোবাইল টি ফ্লরে পরে আছে, আয়নার কাচ গুলা ভেজ্ঞে পুরা রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।যাক অবশেষে শিহাব নিশ্চিত হল যে রাতে স্বপ্ন দেখছে।
,
এক সাপ্তাহ আগেও শিহাব ছিল শান্ত ছেলে। সে সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু তিথির অপমান আর চোখের জ্বল এই দুইটা সহ্য করতে পারে না। তিথির সাথে শিহাবের সম্পর্ক প্রায় দুই বছর। তিথি মধ্যবিও পরিবারের মেয়ে হলেও ভয়ংকর সুন্দরি ছিল।তার রুপে যে কোন ছেলে ঘাহেল হয়ে পড়বে। শিহাব ও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
-তিথি কই তুমি আসবা না (শিহাব)
-না আজকে আসতে পারব না, আব্বু অসুস্থ। (তিথি)
-আচ্ছা তুমি আংকেলের খেয়াল রেখ কাল দেখা হবে
- আচ্ছা বাবু
কথা বলার পর ফোন টা রেখে দিল শিহাব।
ক্যাম্পাসে যেহেতু এসেছি তাহলে রিফাতের সাথে দেখা করেই যাই এই বলে রিফাতকে ফোন দিল শিহাব
শিহাব :কই তুই রে?
রিফাত :দোস্ত আমি একটু অসুস্থ বাসায় আছি আজ আর ক্যাম্পাসে আসব না!
শিহাব :কি হইছে তোর? তুই ডাক্তার দেখাইছিস
রিফাত :হ্যা রে দেখাইছি?
এই বলে রিফাত ফোন রেখে দিল। একা একা ক্যাম্পাসে কি করবে শিহাব বুঝতেছে না। ক্লাস না করে কোথাও বসে কফি খেতে খেতে এসাইন্মেন্ট করার সিন্ধান্ত নিল। বাইক ষ্টার্ট দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রিফাতের খুব পছন্দের রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। কফির অডার দিয়ে লেপটপ অন করেই একটা সুপরিচিত কন্ঠ শিহাবের কানে ভেসে উঠল। কফির মগে চুম্মক দিতে দিতে যা দেখল তা নিজেকে বিশ্বাস করতে পারল না। দুই চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল। না আবার সেই একই জিনিস দেখল। এ কি করে সম্ভব তিথি তো বাসায় তার আব্বু অসুস্থ আর রিফাত..... তার মানে দুই জনে। না না না এ হতে পারে না, একটু আড়াল হয়ে দেখতে গেল তাদের ঘনিষ্টতা। দুই জন একে অপরের হাত ধরে বসে আছে, একটু পর পর রিফাত তিথির গালে পরা চুল গুলো শড়িয়ে দিচ্ছে।
রিফাত : তিথি আমাদের সম্পর্কের কথা যদি শিহাব জানতে পারে তাহলে দুই জনকেই মেরে ফেলবে?
তিথি : শিহাব কখনো জানতেই পারবে না আর কেউ বললেও বিশ্বাস করবে না। ঐ বলদটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে আর বিশ্বাস করে।
রিফাত : আর তুমি কাকে ভালবাস?
তিথি :আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি আর কাউকে না।
রিফাত :তাহলে ওর সাথে ব্রেক আপ কর না কেনো?
তিথি : তুমি জানো তো আমার ফ্যামিলির অবস্থা, আব্বু অসুস্থ আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে খুব কস্ট হয়, আব্বুর প্যানশনের টাকায় কি আর সংসাদ চলে। শিহাব আমার লেখাপড়ার টাকা টা দেয় তাই ব্রেক আপ করতেছি না। সময় হলেই করে দিব।
সব কথা আড়ি পেতে শুনার পর রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করল শিহাব। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে বসে তার নিজ কানে জা শুনলো নিজেকে বিশ্বাস করাতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে। যাকে নিজের ভাইয়ের মত ভালোবাসতো সেই কি না এমন করল। যে মেয়েকে নিজের পকেট খরচ আর টিউশনির কথা বলে টাকা নিয়ে যে মেয়ের পড়া শুনার টাকা দিত সেই মেয়ে বিশ্বাস ঘতকতা করল। এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল শিহাব। ঘুম থেকে উঠেই
শিহাব : দোস্ত আজ লং ড্রাইভে যাব তুই রেডি হয়ে বাসার নিচে থাক আমি আসতেছি
রিফাত : আচ্ছা তুই আয় :
প্রায় ৯ টার দিকে বেরিয়ে পড়ল শিহাব আর রিফাত। নিদিষ্ট কোন যায়গা নেই, প্রায় ২ ঘন্টা পর গাড়িটা থামাল গাজিপুরের শালবনের গভীর জংগলে।
-কিরে এখানে থামালি কেনো? (রিফাত)
-তোকে খুন করার জন্যে।( শিহাব)
-মজা করিস
-হ্যা আবার না?
কথা শেষ করে দুই জনে কিছু ফটো তুলে পানি পান করতেছে
,
-তিথির সাথে তোর কিসের সম্পর্ক? (শিহাব)
-মানে কি? (রিফাত)
-তুই ভাল করেই জানিস মানে কি?
-না মানে শিহাব
-তোর কোন ইচ্ছা অপূর্ন রাখি নি কিন্তু তুই আমার সাথে এই বিশ্বাস ঘতকতা করতে পাড়লি। নিজের টিফিনের অর্ধেক খাওয়াতাম তোকে আর তুই কি না........
কথা গুলা বলতে বলতে পিছন থেকে রিভোলবার টা বের কিরে ট্রিগার চেপে ৩ টা গুলি বুক বরাবর বসিয়ে দিল। রিফাতকে আর কিছু বলার চান্স দিল না। গাড়ির ডিক্কি থেকে কোদাল বের করে গভীর জঙ্গলের মাঝে রিফাতের বডিটা লুকিয়ে রেখে আসল শিহাব সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে গাড়িতে উঠে পরল। যদি সিগারেট সব সময় খায় না তবে আজ খেয়েছে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল শিহাব। সকালে ঘুম থেকে উঠল তিথির ফোনে আজ নয় প্রত্যেক দিন তাই হয়।
বাহ কি সুন্দর করে অভিনয় করতে পারে মেয়েটি। তাকে তো সেরা নাট্যকারের পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। বিরবির করতে থাকে শিহাব। ফ্রেশ হয়ে তিথিকে ফোন দিল।
,
-তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে (শিহাব)
হঠাৎ শিহাবের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসল তিথি।
-কি সারপ্রাইজ (তিথি)
-গেলেই দেখতে পাবে?
-আজ না গেলে হয় না?
-আরে চল তো।
-ওকে আস।
-তুমি ক্যাম্পাসের গেটে আস আমি আসতেছি।
এই বলে ফোন রেখে দিল শিহাব।
এক প্রকার জোরাজুরি করে নিয়ে গেল শিহাব। যদিও তিথি রাজি ছিল না তবুও গেল। এর আগে যত বার সারপ্রাইজ দিয়েছে তত বার মূল্যবান কিছু পেয়েছে। হয়ত এবার ও পাবে।
-কি এমন সারপ্রাইজ দিবা যে আমাকে বলা যাবে না?
-গেলেই দেখতে পারবে এটা তোমার জীবনের সেরা এবং শেষ সারপ্রাইজ।
-মানে কি শিহাব?
উত্তর না দিয়া গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে শিহাব। গাড়ি টা সেই গভীর জঙ্গলে নিয়ে থামাল। রিফাতের মত তিথির কত গুলা ফটো উঠাল।
-আমার সারপ্রাইজ কই? (তিথি)
-চল আমার সাথে। (শিহাব)
-হুম চল।
-এটা কি আর এখানে কি আছে জানো?
-না (কিছুটা ঘাবরে উত্তর দিল তিথি)
-এখানে তোমার আশিক আমার প্রান প্রিয় বন্ধু রিফাত চির নিদ্রায় আছে।
-মানে কি শিহাব (ভয় পেয়ে)
-যা ভাবছ তাই আর এখন তুমিও ওর সজ্ঞি হতে যাচ্ছো।
-আমার অপরাধ কি?
-অপরাধ তোমার না তিথি অপরাধ আমার যে তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালবেসেছিলাম আর তার প্রতিদান আমি পেয়েছি।
,
কথাটা শেষ করে তিথির বুকে ৩ টা বুলেট বসিয়ে দিল। তিথির নিথর বডিটা কোলে তুলে রিফাতের কবরের পাশে দাফন করে রেখে দিল।
,
বলেছিলাম না তুমি আমার না তো কারোই না। দেখো আজ তুমি কারোই নও। ভালবেসে বিশ্বাস করেছিলাম।আর তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পাড়লা। দিলাম তো দুই জনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে।
তিথির লাশ টা দাফন করে বাসায় ফিরে, ফ্রেশ হয়ে বিচানায় শুয়ে পড়ল। রাত প্রায় ১২ টা এবার ঘুমানোর জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে শিহাব। চোখে ঘুম না থাকা শর্তেও তাকে ঘুমাতে হবে কিন্তু বার বার রিফাত আর তিথির কথা মনে পরতেছে। কয়েক ঘন্টা আগেই তিথিকে চির নিদ্রায় পাঠিয়েছে। যে কিনা তিথির একটু আপমান সহ্য করতে পারত না সে নিজের হাতে তিথিকে।
,
টেবিলে রিফাতের ছবি দেখে তাকে খুব মিস করছে শিহাব, তার চিন্তায় শিহাব এখন মগ্ন।
-আমার কথায় ভাবছিস তাই না? (রিফাত)
-তুই তুই এখানে কি করিস (শিহাব)
-তোকে দেখতে আসলাম।
-আমাকে দেখার কি আছে তুই একটা বেইমান,মীর জাফর ।
-হা হা হা এই জন্যে আমাকে মেরে ফেলতে পাড়লি। দেখ আমি মরি নি। বেচে আছি আর থাকব যত দিন না তুই তোর অপরাদের শাস্তি পাবি না।
.
কথা গুলা বলে অদৃশ্য হয়ে গেল রিফাত।
যত দিন যাচ্ছে শিহাবের অবনতী ঘটছে। কি সব উদ্ভট কথা বলে। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। বার বার তিথি আর রিফাতের কথা বলে। এভাবে ধীরে ধীরে প্রায় পাগলে পরিনত হল। যত দিন যাচ্ছে তার পাগলামি বেড়েই চলছে। এখন সে পাগলা গাড়দে ভর্তি অবস্থায় আছে।এখন আর রিফাত আর তিথি তার কল্পনায় আসে না আর আসলেও কেউ বুজতে পাড়ে না কারণ শিহাব এখন পাগল। পাগল তো অনেক কিছুই বলে তাই বলে কি সবাই সেই পাগলের কথা শোনে,,,,,??
,
,
(সমাপ্ত)
-আমি সব করতে পারি। (শিহাব)
-কিন্তু কেনো?
-আমার পছন্দের জিনিসের দিকে কেউ নজর দিলে কাউকে ছাড়ি না।
-তাই বলে.....
-হ্যা, যে জিনিসটা আমার না সেটা কারো হতে পারে না। আমি তো তোমাকে চেয়েছিলাম আর কিছু চাইনি। তোমার জন্যে কি বা করি নি। নিজের টিউশনির টাকা বাচিয়ে তোমাকে দিয়েছি আর সেই তুমি কি না...
-কি যা তা বলছো শিহাব?
-এখন তো যা তাই মনে হবে। নতুন কাউকে পেয়েছো তাই তো আমার সব কথা ভুল আর যাতা মনে হবে।
-ছি শিহাব,
-হা হা হা
-তুমি রিফাতকেও মেরে ফেলছো। এটা কি করে পারলা, ও না তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ।
-হ্যা রিফাত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আর আমার জীবনের অমূল্যবান সম্পদের দিকে হাত দেয়ায় তাকেও দুনিয়া থেকে সড়িয়ে দিয়েছি। হা হা হা
-আর আমি কি দোষ করেছিলাম যার শাস্তি এভাবে দিলে। খুব বেশি ভালবেসেছিলাম সেই অপরাধে নাকি?
-তুমিই তো সব নষ্টের মূলে ছিলা। তোমার জন্যে আমি রিফাতকে মেরেছিলাম। ছেদে ছিলাম অনেক বন্ধুদের সংজ্ঞ। তারা বলেছিল তুমি ভাল না তাই তাদের বিভিন্ন ভাবে শাস্তি দিয়েছি। আর সেই তুমি অন্যের সাথে ফস্টি নস্টি করছো তাই তোমাকেও দুনিয়া থেকে সড়িয়ে দিয়েছি।
-হা হা হা আমি মরিনি দিব্বি বেঁচে আছি আর বেঁচে থাকব যত দিন তোমার শাস্তি হবে না।
-তুমি যিবিত থেকেও শান্তি দাও নি মরেও শান্তি দিবা না?
-হ্যা হ্যা হ্যা তোমার শান্তি নাই।
বালিশের পাশে থাকা মোবাইল টি নিয়ে তিথির দিকে ছুড়ে মারল শিহাব। আর সাথে সাথে তিথি অদৃশ্য হয়ে গেল। ফজরের আযান দেয়ার সাথে সাথেই শিহাবের ঘুম ভেজ্ঞে গেল। দরজা খোলা দেখে শিহাব ঘাবড়ে গেল। তাহলে কি তিথি বেঁচে আছে নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি তো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছি তাহলে দরজা খোলা কেনো। না এ হতে পারে না। বালিশের পাশে রাখা টিশার্ট টি পরে তাড়াতাড়ি করে চলে গেল সেই যায়গায় যেখানে রিফাত আর তিথিকে মাটি চাপা দিয়ে কবর দিয়েছিল শিহাব। গিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। তাহলে কি সব স্বপ্ন ছিল, তাহলে যে মোবাইল দিয়ে মারার পর দৌড় দিল সেটা কি ছিল? আর দরজাই বা কে খুলে দিল? এই সব চিন্তা করতে করতে বাসায় এসে পৌছায় শিহাব।
-স্যার আপনি এত সকালে তাড়াহুড়া করে কি যেন বিরবির করতে করতে কই গেছিলেন (দারোয়ান)
-সেটা কি আপনাকে বলতে হবে? আপনার যা কাজ তা করুন
এক প্রকার ধমক দিয়ে বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলল শিহাব। দারোয়ান চাচা মন খারাপ করে ভাবতে লাগল। শিহাব স্যার তো আগে এমন ছিল না সব সময় সালাম দিয়ে বাবাজি বাবাজি করে কথা বলত কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে খুব বাজে ব্যবহার করতেছে কারন কী।
শিহাব রুমে গিয়ে দেখল মোবাইল টি ফ্লরে পরে আছে, আয়নার কাচ গুলা ভেজ্ঞে পুরা রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।যাক অবশেষে শিহাব নিশ্চিত হল যে রাতে স্বপ্ন দেখছে।
,
এক সাপ্তাহ আগেও শিহাব ছিল শান্ত ছেলে। সে সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু তিথির অপমান আর চোখের জ্বল এই দুইটা সহ্য করতে পারে না। তিথির সাথে শিহাবের সম্পর্ক প্রায় দুই বছর। তিথি মধ্যবিও পরিবারের মেয়ে হলেও ভয়ংকর সুন্দরি ছিল।তার রুপে যে কোন ছেলে ঘাহেল হয়ে পড়বে। শিহাব ও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
-তিথি কই তুমি আসবা না (শিহাব)
-না আজকে আসতে পারব না, আব্বু অসুস্থ। (তিথি)
-আচ্ছা তুমি আংকেলের খেয়াল রেখ কাল দেখা হবে
- আচ্ছা বাবু
কথা বলার পর ফোন টা রেখে দিল শিহাব।
ক্যাম্পাসে যেহেতু এসেছি তাহলে রিফাতের সাথে দেখা করেই যাই এই বলে রিফাতকে ফোন দিল শিহাব
শিহাব :কই তুই রে?
রিফাত :দোস্ত আমি একটু অসুস্থ বাসায় আছি আজ আর ক্যাম্পাসে আসব না!
শিহাব :কি হইছে তোর? তুই ডাক্তার দেখাইছিস
রিফাত :হ্যা রে দেখাইছি?
এই বলে রিফাত ফোন রেখে দিল। একা একা ক্যাম্পাসে কি করবে শিহাব বুঝতেছে না। ক্লাস না করে কোথাও বসে কফি খেতে খেতে এসাইন্মেন্ট করার সিন্ধান্ত নিল। বাইক ষ্টার্ট দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রিফাতের খুব পছন্দের রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। কফির অডার দিয়ে লেপটপ অন করেই একটা সুপরিচিত কন্ঠ শিহাবের কানে ভেসে উঠল। কফির মগে চুম্মক দিতে দিতে যা দেখল তা নিজেকে বিশ্বাস করতে পারল না। দুই চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল। না আবার সেই একই জিনিস দেখল। এ কি করে সম্ভব তিথি তো বাসায় তার আব্বু অসুস্থ আর রিফাত..... তার মানে দুই জনে। না না না এ হতে পারে না, একটু আড়াল হয়ে দেখতে গেল তাদের ঘনিষ্টতা। দুই জন একে অপরের হাত ধরে বসে আছে, একটু পর পর রিফাত তিথির গালে পরা চুল গুলো শড়িয়ে দিচ্ছে।
রিফাত : তিথি আমাদের সম্পর্কের কথা যদি শিহাব জানতে পারে তাহলে দুই জনকেই মেরে ফেলবে?
তিথি : শিহাব কখনো জানতেই পারবে না আর কেউ বললেও বিশ্বাস করবে না। ঐ বলদটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে আর বিশ্বাস করে।
রিফাত : আর তুমি কাকে ভালবাস?
তিথি :আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি আর কাউকে না।
রিফাত :তাহলে ওর সাথে ব্রেক আপ কর না কেনো?
তিথি : তুমি জানো তো আমার ফ্যামিলির অবস্থা, আব্বু অসুস্থ আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে খুব কস্ট হয়, আব্বুর প্যানশনের টাকায় কি আর সংসাদ চলে। শিহাব আমার লেখাপড়ার টাকা টা দেয় তাই ব্রেক আপ করতেছি না। সময় হলেই করে দিব।
সব কথা আড়ি পেতে শুনার পর রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করল শিহাব। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে বসে তার নিজ কানে জা শুনলো নিজেকে বিশ্বাস করাতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছে। যাকে নিজের ভাইয়ের মত ভালোবাসতো সেই কি না এমন করল। যে মেয়েকে নিজের পকেট খরচ আর টিউশনির কথা বলে টাকা নিয়ে যে মেয়ের পড়া শুনার টাকা দিত সেই মেয়ে বিশ্বাস ঘতকতা করল। এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল শিহাব। ঘুম থেকে উঠেই
শিহাব : দোস্ত আজ লং ড্রাইভে যাব তুই রেডি হয়ে বাসার নিচে থাক আমি আসতেছি
রিফাত : আচ্ছা তুই আয় :
প্রায় ৯ টার দিকে বেরিয়ে পড়ল শিহাব আর রিফাত। নিদিষ্ট কোন যায়গা নেই, প্রায় ২ ঘন্টা পর গাড়িটা থামাল গাজিপুরের শালবনের গভীর জংগলে।
-কিরে এখানে থামালি কেনো? (রিফাত)
-তোকে খুন করার জন্যে।( শিহাব)
-মজা করিস
-হ্যা আবার না?
কথা শেষ করে দুই জনে কিছু ফটো তুলে পানি পান করতেছে
,
-তিথির সাথে তোর কিসের সম্পর্ক? (শিহাব)
-মানে কি? (রিফাত)
-তুই ভাল করেই জানিস মানে কি?
-না মানে শিহাব
-তোর কোন ইচ্ছা অপূর্ন রাখি নি কিন্তু তুই আমার সাথে এই বিশ্বাস ঘতকতা করতে পাড়লি। নিজের টিফিনের অর্ধেক খাওয়াতাম তোকে আর তুই কি না........
কথা গুলা বলতে বলতে পিছন থেকে রিভোলবার টা বের কিরে ট্রিগার চেপে ৩ টা গুলি বুক বরাবর বসিয়ে দিল। রিফাতকে আর কিছু বলার চান্স দিল না। গাড়ির ডিক্কি থেকে কোদাল বের করে গভীর জঙ্গলের মাঝে রিফাতের বডিটা লুকিয়ে রেখে আসল শিহাব সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে গাড়িতে উঠে পরল। যদি সিগারেট সব সময় খায় না তবে আজ খেয়েছে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল শিহাব। সকালে ঘুম থেকে উঠল তিথির ফোনে আজ নয় প্রত্যেক দিন তাই হয়।
বাহ কি সুন্দর করে অভিনয় করতে পারে মেয়েটি। তাকে তো সেরা নাট্যকারের পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। বিরবির করতে থাকে শিহাব। ফ্রেশ হয়ে তিথিকে ফোন দিল।
,
-তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে (শিহাব)
হঠাৎ শিহাবের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসল তিথি।
-কি সারপ্রাইজ (তিথি)
-গেলেই দেখতে পাবে?
-আজ না গেলে হয় না?
-আরে চল তো।
-ওকে আস।
-তুমি ক্যাম্পাসের গেটে আস আমি আসতেছি।
এই বলে ফোন রেখে দিল শিহাব।
এক প্রকার জোরাজুরি করে নিয়ে গেল শিহাব। যদিও তিথি রাজি ছিল না তবুও গেল। এর আগে যত বার সারপ্রাইজ দিয়েছে তত বার মূল্যবান কিছু পেয়েছে। হয়ত এবার ও পাবে।
-কি এমন সারপ্রাইজ দিবা যে আমাকে বলা যাবে না?
-গেলেই দেখতে পারবে এটা তোমার জীবনের সেরা এবং শেষ সারপ্রাইজ।
-মানে কি শিহাব?
উত্তর না দিয়া গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে শিহাব। গাড়ি টা সেই গভীর জঙ্গলে নিয়ে থামাল। রিফাতের মত তিথির কত গুলা ফটো উঠাল।
-আমার সারপ্রাইজ কই? (তিথি)
-চল আমার সাথে। (শিহাব)
-হুম চল।
-এটা কি আর এখানে কি আছে জানো?
-না (কিছুটা ঘাবরে উত্তর দিল তিথি)
-এখানে তোমার আশিক আমার প্রান প্রিয় বন্ধু রিফাত চির নিদ্রায় আছে।
-মানে কি শিহাব (ভয় পেয়ে)
-যা ভাবছ তাই আর এখন তুমিও ওর সজ্ঞি হতে যাচ্ছো।
-আমার অপরাধ কি?
-অপরাধ তোমার না তিথি অপরাধ আমার যে তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালবেসেছিলাম আর তার প্রতিদান আমি পেয়েছি।
,
কথাটা শেষ করে তিথির বুকে ৩ টা বুলেট বসিয়ে দিল। তিথির নিথর বডিটা কোলে তুলে রিফাতের কবরের পাশে দাফন করে রেখে দিল।
,
বলেছিলাম না তুমি আমার না তো কারোই না। দেখো আজ তুমি কারোই নও। ভালবেসে বিশ্বাস করেছিলাম।আর তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পাড়লা। দিলাম তো দুই জনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে।
তিথির লাশ টা দাফন করে বাসায় ফিরে, ফ্রেশ হয়ে বিচানায় শুয়ে পড়ল। রাত প্রায় ১২ টা এবার ঘুমানোর জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে শিহাব। চোখে ঘুম না থাকা শর্তেও তাকে ঘুমাতে হবে কিন্তু বার বার রিফাত আর তিথির কথা মনে পরতেছে। কয়েক ঘন্টা আগেই তিথিকে চির নিদ্রায় পাঠিয়েছে। যে কিনা তিথির একটু আপমান সহ্য করতে পারত না সে নিজের হাতে তিথিকে।
,
টেবিলে রিফাতের ছবি দেখে তাকে খুব মিস করছে শিহাব, তার চিন্তায় শিহাব এখন মগ্ন।
-আমার কথায় ভাবছিস তাই না? (রিফাত)
-তুই তুই এখানে কি করিস (শিহাব)
-তোকে দেখতে আসলাম।
-আমাকে দেখার কি আছে তুই একটা বেইমান,মীর জাফর ।
-হা হা হা এই জন্যে আমাকে মেরে ফেলতে পাড়লি। দেখ আমি মরি নি। বেচে আছি আর থাকব যত দিন না তুই তোর অপরাদের শাস্তি পাবি না।
.
কথা গুলা বলে অদৃশ্য হয়ে গেল রিফাত।
যত দিন যাচ্ছে শিহাবের অবনতী ঘটছে। কি সব উদ্ভট কথা বলে। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। বার বার তিথি আর রিফাতের কথা বলে। এভাবে ধীরে ধীরে প্রায় পাগলে পরিনত হল। যত দিন যাচ্ছে তার পাগলামি বেড়েই চলছে। এখন সে পাগলা গাড়দে ভর্তি অবস্থায় আছে।এখন আর রিফাত আর তিথি তার কল্পনায় আসে না আর আসলেও কেউ বুজতে পাড়ে না কারণ শিহাব এখন পাগল। পাগল তো অনেক কিছুই বলে তাই বলে কি সবাই সেই পাগলের কথা শোনে,,,,,??
,
,
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন